নানিয়ারচর(রাঙ্গামাটি)প্রতিনিধি:-
কমিউনিটি পুলিশিং একটি সাংগঠনিক দর্শন ও ব্যবস্থাপনা; যা জনগণকে সম্পৃক্ত করে। জনগণ, সরকার ও পুলিশের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে এই কার্যক্রম অপরাধ দমন ও সমস্যা সমাধানকল্পে অপরাধের কারণ দূরীকরণ, অপরাধ প্রবণতা হ্রাস ও সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেয়। এর মূলমন্ত্র হচ্ছে ‘শান্তি-শৃঙ্খলা সর্বত্র’। সমাজের প্রতিটি স্তরে অপরাধ প্রবণতা দূরীকরণ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে কমিউনিটি পুলিশিং সদস্যরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে এবং সমাজকে নিরাপদ রাখবে- এমনটাই প্রত্যাশা করছেন পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের প্রতিকার ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া, জনগণকে সচেতন করা, আইনি সহায়তা দেওয়া এবং পুলিশ ও জনগণের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছে কমিউনিটি পুলিশ। প্রতি বছর অক্টোবর মাসের শেষ শনিবার ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’ পালন করা হচ্ছে। প্রতি বছরের মতো এবারও শনিবার (২৯ অক্টোবর) ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে-২০২২’ পালন করা হচ্ছে।
নানিয়ারচর থানা পুলিশ কমিনিটি ডে অনুষ্ঠানে কমিউনিটি পুলিশিং, মাদক, জুয়া, নারী নির্যাতন, বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং, সাইবার অপরাধ বা আসক্তি সংক্রান্ত গম্ভীরা, আলোচনা করা হয়েছে ।
কমিনিটি পুলিশ , আইনগত সহায়তার প্রয়োজনে পুলিশ বা থানায় যাওয়ার প্রয়োজন হয় ৫-১০ শতাংশ সাধারণ মানুষের। বাকি ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ সাধারণ মানুষের থানা বা পুলিশের সংস্পর্শে যাওয়া হয় না। ফলে কমিউনিটি পুলিশিং বা বিট পুলিশিং কার্যক্রম চালুর আগে পুলিশ বা থানায় যেতে সাধারণ মানুষের মধ্যে অস্বস্তিবোধ ছিল। পুলিশের সংস্পর্শে না থাকায় সাধারণ মানুষও পুলিশের কর্মপরিধি ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিল না। কিন্তু কমিউনিটি পুলিশিং ও বিট পুলিশিং ব্যবস্থা চালুর পরিপ্রেক্ষিতে থানা ও পুলিশের সংস্পর্শে যেতে মানুষের অস্বস্তিবোধ নাই। ফলে যেকোনও পুলিশিং কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ পুলিশের পাশে থেকে পুলিশের কাজকে সহজ করে দিয়েছে। এমনকি প্রতিটি বিট-এ বিটভিত্তিক ওপেন হাউজ ডে চালু করা হয়েছে। সেখানে সাধারণ মানুষ তাদের অভিযোগ অনায়াসে বলতে পারে। এছাড়া বিট ভিত্তিক কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম চালু করা হয়েছে, যার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ মানুষ পুলিশের কাছ থেকে যে কোনও আইনি সেবা পেতে পারে।
যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক বাংলাদেশের নাগরিক কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্য হওয়ার যোগ্য। তবে বিতর্কিত ও টাউট প্রকৃতির লোক, চোরাকারবারী বা অবৈধ কাজের সাথে সম্পৃক্ত আছে বলে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে কিংবা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাদের কোনভাবেই কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্য করা যাবে না। কমিটির মধ্যে সকল শ্রেণি, পেশা, ধর্ম, বর্ণ ও জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব থাকে। কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থায় কমিউনিটির সদস্যরা স্বেচ্ছায় নিজেদের কমিউনিটিতে উদ্ভূত সমস্যাগুলো পুলিশের সহায়তায় ও অংশীদারিত্বে নিজেরাই সমাধানে একমত হয়। এটা এক ধরনের সমাজসেবামূলক অরাজনৈতিক কার্যক্রম, তাই যেসব ব্যক্তি সমাজ ও জনসেবায় ব্রতী, সমাজসেবা করে যারা আত্মতৃপ্তি পান কিন্তু বিনিময়ে কোনও ব্যক্তিগত বৈষয়িক প্রাপ্তি প্রত্যাশা করেন না; এমন ব্যক্তিদেরই কমিউনিটি পুলিশিং-এর কমিটির সদস্য করার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। গণ্যমান্য বয়স্ক লোকদের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য এবং অপেক্ষাকৃত কম বয়সের কর্মদ্যোগী ব্যক্তিদের কার্যকরী কমিটির সদস্য করা হয়। বিশিষ্ট রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদেরও উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য করা হয়।
উল্লেখ্য বর্তমানে বাংলাদেশ পুলিশের সকল জেলা, রেলওয়ে, হাইওয়ে, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও মেট্রোপলিটন ইউনিটে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের চলমান কার্যক্রমকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী মোট ৫৪ হাজার ৭১৮টি কমিটিতে ৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০১ জন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য কাজ করছে। কমিউনিটি পুলিশিং এর বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে। যেমন ওপেন হাউজ ডে এর মাধ্যমে স্থানীয় সমস্যাবলি নিয়ে মতবিনিময় সভা, গণসচেতনতামূলক কার্যক্রম, অপরাধ বিরোধী সভা, দৃশ্যমান পেট্রোল ইত্যাদির মাধ্যমে সমাজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সফলভাবে কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। বিগত ২০২১-২০২২ পর্যন্ত সময়ে সারাদেশে মোট ৪ হাজার ৩৫৬টি ওপেন হাউজ ডে-তে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৪৮টি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। অপরাধ প্রতিরোধমূলক (বিট পুলিশিং) ৩৩ হাজার ৮২টি সভা আয়োজন করা হয়েছে। সভায় পুলিশের কাজে সহযোগিতা ও অপরাধ সচেতনতা তৈরিতে বাল্য বিবাহ রোধ, ইভটিজিং প্রতিরোধ, জঙ্গিবাদ দমন, সন্ত্রাস দমন, মাদকের কুফল, নারী নির্যাতন, শিশু নির্যাতন, যৌতুক নিরোধ, মোবাইলের অপব্যবহার ও সামাজিক মূল্যবোধ সংক্রান্তে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আলোচনা করা হয়।
সাধারণত পুলিশের সংখ্যা কোনও দেশের মোট জনসংখ্যার অনুপাতে নির্ধারিত হয়। সে পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের প্রতিবেশি দেশগুলোর তুলনায়ও আমাদের দেশের বিদ্যমান পুলিশের জনবল খুবই কম। কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশ স্বল্প জনবল দিয়ে কিভাবে নিত্য-নতুন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করে সমাজে শান্তি বজায় রাখা যায়, সেজন্য জনগণকে সাথে নিয়ে নতুন নতুন পুলিশিং পদ্ধতি চালু করেছে। আর কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম চালুর ফলে পুলিশে স্বল্প জনবল দিয়েও সমাজের সাধারণ মানুষকে সাথে নিয়ে সামাজিক অপরাধ প্রতিরোধে অনেকটা সফল হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশের সকল জেলায় কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি এবং প্রতিটি থানায় কমিউনিটি পুলিশিং অফিসার রয়েছে।
সারা দেশে প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলায় কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি কার্যকর, যাতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ রয়েছে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন,প্রধান অতিথি নানিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ সুজন হালদার,মুন্সী আনিসুর রহমান( তদন্ত)এস আই আনোয়ার,এস আই তারেক,এস আই তারেক, সদস্য মোস্তফা,মহিলা সদস্য নাছিমা বেগম সহ থানার সকল পুলিশ সদস্য।
বক্তব্যে প্রধান অতিথি বলেন,কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার আগেই সংশ্লিষ্ট সদস্যের ইতিবৃত্ত যাচাই-বাছাই করা হয়। যাতে খারাপ বা বিতর্কিত কোনও ব্যক্তি কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত না হয়। কোন লোক কমিউনিটি পুলিশিং এর সদস্য হয়ে নিজ স্বার্থ হাসিল বা কোন অপরাধে জড়িত হয়ে পড়লে তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ হলে বা মৌখিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রয়োজনে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এছাড়া আমারা নানিয়ারচরে কমিনিটি পুলিশের মাধ্যমে পাহাড়ের জনগণের মাঝে আস্থা অর্জন করে যাচ্ছি।