মো: নাজমুল হোসেন রনি,রাঙ্গামাটি:-
২ ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তি। ১৯৯৭ সালের এই দিনে সরকার ও জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষে তৎকালিন চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লার সঙ্গে শান্তিচুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সভাপতি জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমা। চুক্তি স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে শান্তিবাহিনীর দীর্ঘ প্রায় দুই দশকের সংগ্রামের। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে শান্তিবাহিনীর সশস্ত্র আন্দোলনকারী সদস্যরা। শান্তিচুক্তির ফলে প্রাথমিকভাবে শান্তি বাহিনীর সদস্যরা অস্ত্র জমা দেয়। সরকার তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫তম বছরপূর্তি উপলক্ষে সকাল ৮টায় ধানমন্ডিস্থ ৩২নং বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে রক্ষিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং।
এছাড়াও বর্ষপূর্তী উপলক্ষে সকাল ১০ টায় বেইলী রোডস্থ ‘শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স’ ভবনে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহবায়ক (মন্ত্রী পদমর্যাদা) আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ।
ইতোমধ্যে চুক্তির বেশির ভাগ ধারাই বাস্তবায়িত হয়েছে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা, শিক্ষার হার বৃদ্ধিসহ পাহাড়িদের জীবনযাত্রার মানে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু শান্তিবাহিনীর আদলে সশস্ত্র ৪টি গ্রুপ সক্রিয় থাকায় পাহাড়ে পুরোপুরি শান্তি ফেরেনি।
চুক্তির বিরোধিতা করে প্রসিত বিকাশ খীসার নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে গড়ে ওঠে ইউনাইটেড পিপল ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এরপর শুরু হয় জনসংহতি সমিতির সঙ্গে ইউপিডিএফ-এর সংঘাত। ঘটে বহু মানুষের প্রাণহানি। পরে জনসংহতি সমিতি ভেঙে দুই দলে বিভক্ত হয়।
জন্মলাভ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা) নামে আরেকটি আঞ্চলিক দল। ইউপিডিএফ ভেঙেও গঠিত হয় ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক) নামে আরেক আঞ্চলিক সংগঠন। এরপর থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনীতি ও চাদাবাজি এবং আধিপত্য বিস্তারে চারটি দলে হানাহানি লেগেই আছে।
দিবসটি উপলক্ষে (শুক্রবার) সচিবালয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী জনাব বীর বাহাদুর উশৈসিং।
এদিকে সরকার পক্ষ পার্বত্য জেলাসমূহের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডকে টেকসই ও বেগবান করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে আরও নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য এলাকার সকল জনগোষ্ঠীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপার আধার। যুগযুগ ধরে পাহাড়ে বসবাসরত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর বর্ণিল জীবনাচার, ভাষা, কৃষ্টি ও সংস্কৃতি এ অঞ্চলকে বিশেষভাবে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে শান্তিপূর্ণভাবে বিরোধ নিষ্পত্তি করেছেন, যা একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
এছাড়া আওয়ামী লীগ সরকার শান্তি চুক্তির আলোকে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে পার্বত্য জেলাসমূহের জনগণ ও দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার শান্তি চুক্তির আলোকে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন করতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে জাতির পিতার সুখী-সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’ বাণীতে তিনি পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির ২৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
এদিকে তিন পার্বত্য জেলায় শান্তি চুক্তির ২৫তম বর্ষপূর্তী উপলক্ষ্যে পাহাড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জনসাধারণ শোভাযাত্রা, র্যালীর ও বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।