লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি:-
বান্দরবানের লামা উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিনের উপর পৌর মেয়রের ফুফাতো ভাই মোঃ সাইদুর রহমান সাইদ ও পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি রফিক সহ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের উপর বর্বরোচিত হামলা ও অফিস কক্ষ ভাংচুরের ঘটনায় সী হিল হোটেলের মালিক ওসমান গণি মামলা দায়ের করেছে।
এই হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে জেলার লামা উপজেলায় আওয়ামী লীগের সকল ইউনিটে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠেছে। একপক্ষের দাবি, পৌর মেয়রের নির্দেশে তার ফুফাতো ভাই ও আপন ছোট ভাই এই হামলা চালিয়েছে।
আরেক পক্ষের দাবি,পূর্ব ভূল ধারণাকে পুঁজি করে একটি পক্ষ পৌর মেয়রের নামে অপপ্রচার করছে ও পোপাগন্ড ছড়াচ্ছে এই ছাড়া কিছুই নয়।
গত ২৭ জানুয়ারি বিকাল ৫ টায় সী হিলের অফিস কক্ষে ঢুকে লামার পৌর মেয়রের ফুফাতো ভাই আবু সাইদ, পৌর মেয়রের আপন ছোট ভাই মোঃ সোহেল,পৌর যুবলীগের সহ-সভাপতি রফিক সরকারসহ ২/৩ জন যুবলীগ নেতা আলাউদ্দিনের উপর হামলা চালায় ও অফিস কক্ষে ভাংচুর করা,নগত টাকা চুরি করায় ২৯ জানুয়ারী লামা থানায় মামলা দায়ের করেন,সী হিলের মালিক পক্ষ।
হামলায় আহত উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, দুই মন্ত্রীর লামায় আগমন উপলক্ষে পৌর আওয়ামী লীগ সকল সংগঠনের নেতৃবৃন্দের সাথে প্রস্তুতি সভার আয়োজন করে। সেখানে ৮ নং পৌর এলাকার আওয়ামী লীগ পরিবারের বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরলে পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তেলেবেগুনে রেগে যান এবং আমার সাথে বাগবিতণ্ডা হয়। কয়েকশো লোকের সামনে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলেন। এক পর্যায় তিনি আমাকে সভা থেকে বের করে দেন। পরে এই ঘটনার জন্য আমি উপস্থিত সবার সামনে মেয়র জহিরুল ইসলামের কাছে বার বার ক্ষমা চেয়েছি।
তিনি আরও বলেন, হোটেল সী হিলে বসে মোবাইলে কথা বলা শেষ হতেই রফিক আমার হাত ও মুখ চেপে ধরে মেয়রের ফুফাতো ভাই সাঈদের নেতৃত্বে পৌর মেয়রের আপন ছোট ভাই সোহেল সহ বেশ কয়েকজন হামলা চালায়। প্রাণে বাঁচতে ওয়াসরুমে আশ্রয় নিলেও সেখানেও তারা হামলায় চালায়। পরে আওয়াজ শুনে সী হিলের মালিকের ভাইসহ লোকজন উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এই ঘটনার ইন্ধনদাতা হিসেবে পৌর মেয়রের নাম বলছেন আপনি এর কারণ জানতে চাইলে আলাউদ্দিন বলেন, পৌর মেয়রের সাথে বাকবিতন্ডার পর তার আপন ছোট ভাই ও ফুফাতো ভাই এই হামলা চালিয়েছে। সাইদুর রহমান সাইদরা আগে এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটিয়েছে প্রতিবারই মেয়রের কারণে তারা পার পেয়েছে। আমার মত দলীয় কর্মীর উপর এই হামলা হলে সাধারণ মানুষের কি অবস্থান হবে অনুমান করা যায়…?
মামলার বাদী ওসমান গণি বলেন, এটি আমাদের অফিস নয় এটি মরহুম হাজী ইসমাইল চেয়ারম্যানের স্মৃতি বিজড়িত স্থান। বাইরে ঘটনা হলে আমার হলে সমস্যা নেই। কিন্তু আমাদের অফিসে ঢুকে সন্ত্রাসী কায়দায় হামলা ও অফিস ভাংচুরের করায় মামলা করেছি। যদি আমাদের লোকজন উদ্ধার না করলে আলাউদ্দিনকে তারা প্রাণে মেরে ফেলতো। তাকে এখানে (সী হিল অফিসে) কেন অফিসে বসতে দিয়েছে সে বিষয়ে সাইদ যাওয়ার সময় আমার ছোট ভাইয়ের কাছে কৈফিয়ত চেয়েছে। আমাদের অফিসে কে আসবে যাবে সেটি আমরা সিন্ধান্ত নেব অন্য কেউ নয়।
লামার পৌর মেয়র ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম বলেন, আমি কাউকে মারার নির্দেশ দিইনি। সাঈদ কেন আলাউদ্দিনকে মেরেছে সেটা আমি জানিনা, আমার বিরুদ্ধে উদ্দেশ্য মূলক ভাবে অপপ্রচার করছে আলাউদ্দিনের দুই ভাই ও কিছু মানুষ। আলাউদ্দিন প্রস্তুতি সভার এক পর্যায় ক্ষমা চেয়েছে, আমি ক্ষমাও করে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমার ছোট ভাই সোহেল ঘটনা শুনার পর দেখতে গিয়েছে, সে মারামারিতে ছিল না, আমার ছোট ভাই খুব সহজ সরল।
লামা থানার পরিদর্শক (ওসি) শহীদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, মোঃ সাইদুর রহমান সাঈদ ও মোঃ রফিককে আসামী এবং অজ্ঞাত ২/৩ জনকে আসামী করে মামলা হয়েছে, আসামীরা বর্তমানে পলাতক।
এদিকে লামা উপজেলার আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বলেন, আলীকদমে গাড়ী করে গরু পাচার বন্ধ হলেও পাহাড়ী পথে আলীকদম সীমানা পার হওয়ার পর লামা থেকে ট্রাক যোগে মেয়রের ফুফাতো ভাই সাইদুর রহমান সাইদ ও মেয়রের ছোট ভাই নজরুল ইসলাম সোহেল মেয়রের ক্ষমতাকে পুঁজি করে মায়ানমারের অবৈধ গরু পাচারের অন্যতম মূল হোতা আলীকদমের বিএনপির নেতা ইউনুস মিয়াসহ অবৈধ গরু পাচারকারীদের সাথে যোগসাজশে নগত টাকা কমিশনের মাধ্যমে লামা শিলেরতোয়া-ফাইতং হয়ে চকরিয়ায় মায়ানমারের অবৈধ গরু পাচার করেন সাঈদ ও সোহেল।
এ মধ্যে সাইদুর রহমান সাইদের একটি অডিও প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে আলীকদম বিএনপির নেতা ইউনুস মিয়ার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা নিজে স্বীকার করছে।