মো: নাজমুল হোসেন রনি, রাঙ্গামাটি:-
রাঙ্গামাটি নানিয়ারচরের আগাম আনারস হওয়াতে কৃষকের মুখি হাসি ফুটেছে, তবে জ্যৈষ্ঠ মাস আনারসের মাস হলেও বর্তমানে রাঙ্গামাটি জেলার নানিয়ারচরে হরমোনের মাধ্যমে প্রতি বছরই উৎপাদিত হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল হানিকুইন আনারস। যা দেশের অন্য কোথাও ফলন পাওয়া যায় না। রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলাকে আনারসের রাজধানী বলা হয়। রাঙ্গামাটি জেলার মধ্যে আনারসের জন্য বিখ্যাত নানিয়ারচর উপজেলা। নানিয়ারচর উপজেলার মধ্যে প্রায় ৬০ % মানুষ আনারসের চাষ করেন। তবে পাহাড়ি ও বাঙালি জনবসতি এলাকায় আনারসের চাষ করা হয়েছে। আর এ আনারসের চাষ করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন নানিয়ারচর এলাকার মানুষ।
আনারস চাষি বুড়িঘাটের মো: ফারুক হাওলাদার ও ধনকুলো চাকমা জানান, আনারস চাষে অভিজ্ঞতা না থাকলে আনারস চাষ করা সম্ভব নয়, তিনি জানান, ভালো ফলনের জন্য অক্টোবর মাসের আগেই আনারস চাষের জন্য পাহাড়ের জমি প্রস্তুত করতে হয়। প্রায় ১ মাসের চেয়ে বেশি সময় লেগে যায় জমি ঠিকঠাক করে আনারস চাষের উপযোগী করে তুলতে, তবে ভালো ফলনের জন্য নতুন জায়গা নির্বাচন করা জরুরি, এর আগে আনারসের চারা তুলে তা প্রস্তুত করে রাখতে হয়। তারপরে সারি সারি করে পাহাড়ের বুকে লাইন ধরে রোপণ করতে হয়। চারা রোপণের পর প্রায় বছর খানেক অপেক্ষার পর তাতে আনারস আসে। এর আনারস বাগানের সেবাযত্ন ও পরিচর্ষা ও আগাম ফলনের জন্য হরমোন ব্যবহার করতে হয়। তাতেই ভালো ফলন আসা করা যায়। নানিয়ারচরে আনারসের সঙ্গে এখানকার অর্থনৈতিক ভারসাম্য চলমান রয়েছে। বর্তমানে হাইব্রিড আনারস বছরে ২ বার ফলন আসে তাতে শীত মৌসুমের আগেই আনারস বাজারে দেখা যায়।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নানিয়ারচরে প্রচুর পরিমাণে আনারসের চাষ হচ্ছে, রীতিমতো আনারস চাষ করে তাদের ভাগ্য পরিবর্তন হয়েছে বলে তারা জানিয়েছেন বুড়িঘাট ৫নং ওয়ার্ড সদস্য মোস্তফা খান । তিনি বলেন,আমাদের আনারস দেশ এবং দেশের বাইরেও রপ্তানি হচ্ছে। তারা ট্রাক ভর্তি করে আনারস ঢাকা ও চট্টগ্রাম পাইকারি হিসেবে চালান দিয়ে থাকি,এছাড়া আমি নিজেও পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতা । এছাড়াও বুড়িঘাট, ইসলামপুর, বগাছড়ি, ঘিলাছড়ি ও ১৭ বা ১৮ মাইল এলাকার উপজাতি ও বাঙালিরা আনারস বাগান করেছেন।
ইসলামপুরের আনারস চাষি মো: নুর ইসলাম জানান, আনারস চাষে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। পরিশ্রমের ফলে ভালো আনারস আবাদ করা সম্ভব। একটি আনারসে প্রায় ৫-৭ টাকা ব্যয় হয়। ভালো ফলন উৎপাদন হলে তা বিক্রি করা হয় ১০-১৫টাকা। কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের কারণে গত ২ বছর আনারসে তেমন লাভবান হতে পারেনি আনারস চাষিরা। সরকারি সুযোগ সুবিধা না থাকায় অনেকে ব্যাংক লোন নিয়ে আনারস চাষে পুঁজি দিয়েছেন। অনেক সময় ভালো ফলন না হওয়ায় লোকসান গুনতে হয়েছে। সরকারকে আনারস চাষের উপর বিশেষ প্রনোদনা বা স্বল্পসুদে লোন ব্যবস্থা করলে কৃষকদের সুবিধা হবে বলে জানিয়েছেন ইসলামপুর ওয়ার্ডের সদস্য আব্দুস সালাম।
এদিকে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে নানিয়ারচরের আনারস প্রাণ জয় করেছে দেশ বিদেশে।তবে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকরাঘুরতে এসে একবার হলেও একটি আনারস খেয়ে যাচ্ছেন।
নানিয়ারচর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহকারী কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, নানিয়ারচরের ইসলামপুর,বুড়িঘাট,সাবেকক্ষন,ঘিলাছড়ির প্রায় জমিতে আনারসের আবাদ করা হয়েছে। তবে নিজ নিজ মালিকানাধীন জমিতেই চাষিরা এসব আনারসের চাষ করে থাকেন।অনেকসময় নানিয়ারচর কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে ওষুধের সহযোগিতা দিয়ে থাকি। তবে এবারে নানিয়ারচর উপজেলায় আনারসের বাম্পার ফলন হবে বলে মনে করছি।